বিদ্যালয়ে দেহ ব্যবসা, শুনে প্রধান শিক্ষক অজ্ঞান!

নড়াইল সদরের নাকশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে রাতে স্কুলের ক্লাসরুমে দেহ ব্যবসার অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার (১৫ জুন) বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ওই নৈশপ্রহরীসহ জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী।

বিক্ষোভ মিছিলের পর বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে এলাকাবাসীর নানা প্রশ্নে উচ্চ রক্তচাপে আহত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার নাগ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের রাতের বেলা স্কুলে এনে এলাকার লোকদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসা চালাতো নৈশ প্রহরী লতিফ সিকদার। সে একেকদিন একেকজন নারী নিয়ে আসে আর প্রভাবশালীরা এসে তাকে টাকা দিয়ে যায়। এখানে যারা আসে তারা প্রভাবশালী বলে ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারিনি। বুধবার রাতে এলাকাবাসী নৈশ প্রহরী লতিফসহ কয়েকজনকে হাতে-নাতে ধরে স্কুলের গেট আটকে দেয়। পরে প্রভাবশালী কিছু লোকের উপস্থিতিতে ছাড়া পায় ঐ নৈশ প্রহরী। এ ঘটনার পরদিনই (১৩ জুন) স্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভায় ওই দপ্তরিকে সাময়িক বরখাস্ত দেখালেও সেই সভায় প্রধান শিক্ষক এবং একজন সহকারী শিক্ষক ছাড়া কারও স্বাক্ষর নেই।

নাকশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার নাগ বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে ছুটে আসি। এ সময় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফ সিকদার, মফিজুর রহমান সিকদার, সুলতান আহমেদ ও শরিফুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। নৈশপ্রহরী লতিফ তাদের কাছে ছিলেন। আমি ওই সময়ই তাকে পুলিশে দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করি। পরে পুলিশের হাতে তুলে দিতে না পেরে সভাপতির জিম্মায় দিয়ে চলে আসি। শনিবার বিদ্যালয় খুললে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু শনিবার বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী। ওই সময় এলাকার কিছু লোকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার কারণে উচ্চ রক্তচাপে অচেতন হয়ে পড়ি। পরে অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের দপ্তরি ও নৈশপ্রহরী লতিফ সিকদার নিজের দোষ অস্বীকার করে বলেন, ওই দিন আমি বিদ্যালয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। এ ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা আমি জানি না।

স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানায়, প্রায়ই রাতে এই স্কুলের দোতলায় দেহ ব্যবসা চালায় নৈশ প্রহরী লতিব। একেকদিন একেক জন নারী নিয়ে আসে আর প্রভাবশালীরা এসে লতিবকে টাকা দিয়ে যায়। রাতে স্কুলে যারা আসে তারা প্রভাবশালী বলে ভয়ে আমরা কথা বলি না।

প্রতিবেশী বিপ্লব মোল্যা জানান, ‘স্কুল হলো মানুষ গড়ার স্থান, এই স্থানে এই ধরনের অপকর্ম দিনের পর দিন চললেও ম্যানেজিং কমিটি বা প্রধান শিক্ষক কেউ দেখছেন না। এভাবে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।’

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আশরাফ সিকদার এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে নড়াইল সদর থানার এসআই রজত জানান, ‘এ স্কুলের দপ্তরী ও নৈশ প্রহরীর অপকর্মের অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় কয়েকজন জড়িত আছে। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন